স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালিকের সাথে মাত্র ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে নিজের নামের পরে মালিকের নাম যোগ করে আদালতে আত্মসমর্পনের পর কারাগারে গেছে আল-আমিন নামের এক স্কুল ছাত্র। বিষয়টি জানেন না ওই স্কুল ছাত্রের পরিবার। তাই সন্তানের কোন খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন স্কুল ছাত্রের পিতা।এনিয়ে গোটা বরিশালজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই নকল আসামিসহ পাঁচজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সূত্রমতে, নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে অবস্থিত টপ টেন শো-রুমে হামলা মামলার ২১ নম্বর আসামি সোহান তার ইন্টারনেট ব্যবসার কর্মচারী আল-আমিনকে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে ‘আল-আমিন হোসেন সোহান’ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়েছেন। আদালত আসামির জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিকে টপ টেনের শো-রুমে হামলা মামলায় মাজহারুল ইসলাম সোহান গ্রেফতার এড়াতে তার পরিচয়ে কর্মচারী আল-আমিনকে “আল-আমিন হোসেন সোহান” পরিচয় দিয়ে কারাগারে পাঠানোর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরায় নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেছে প্রকৃত আসামি সোহান। গতকাল বুধবার সকালে নকল আসামি আল-আমিনের দিনমজুর পিতা রিকশাচালক ইউনুস আরিন্দা সাংবাদিকদের জানান, কুয়াকাটায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গত ৮ মার্চের পর বাড়িতে ফেরেনি আল-আমিন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নকল আসামি আল-আমিন নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা ইউনুস আরিন্দা ও ফুলবানু বেগম দম্পতির ছোট পুত্র। আল-আমিনের বড় বোন সালমা আক্তার বলেন, আল-আমিন বর্তমানে টিটিসিতে পড়াশুনা করে। এবারে সে এসএসসি পরীক্ষার্থী। সোহান নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীর ইন্টারনেট ব্যবসার কর্মচারী হিসেবে আল-আমিন কয়েকমাস থেকে কাজ করে আসছে। তিনি আরও জানান, গত ৮ মার্চ বাসা থেকে কুয়াকাটায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আল-আমিন নিখোঁজ হয়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। আল-আমিনের জন্ম নিবন্ধনের কার্ড, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদ এবং অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, তার জন্ম ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। সে হিসেবে তার বয়স ১৬ বছর। তবে মামলার এজাহারে সোহানের বয়স দেয়া হয়েছে ২১ বছর। নগরীর শের-ই বাংলা সড়কের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী সোহানের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাবা নুরুল ইসলাম জানান, গত ১০ মার্চ পর্যন্ত সোহান বাসায় ছিলো। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, টপ টেনে হামলা ও লুটের মামলায় নামধারী ১৪ জন আসামি গত ৯ মার্চ দুপুরে আত্মসমর্পণ করলেও সোহান তার কর্মচারী আল-আমিনকে “আল-আমিন হোসেন সোহান” পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণ করান। ৯ মার্চ দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও আসামি সোহানকে সেদিন সন্ধ্যায় সরকারি বিএম কলেজের সামনে দেখা গেছে। তারা আরও জানান, ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে নিজের নামের পরে মালিকের নাম যোগ করে আদালতে আত্মসমর্পনের পর কারাগারে গেছে আল-আমিন নামের ওই স্কুল ছাত্র। সূত্রে আরও জানা গেছে, টপ টেনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় সিসিটিভি’র ফুটেজে মাজহারুল ইসলাম সোহানকে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। সে (সোহান) ওই মামলার অন্যতম আসামি মারুফ হাসান টিটুর পাশে ছিলেন। মামলায় ২১ নম্বর আসামি হিসেবেও তার (সোহান) নাম রয়েছে। অথচ সোহান প্রতারনা করে তার কর্মচারী আল-আমিনকে “আল-আমিন হোসেন সোহান” বানিয়ে আদালতে আত্মসমর্পন করিয়েছে। আদালতের বিচারক সব আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়ায় বর্তমানে নকল সোহান কারাভোগ করছেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আশরাফুল আলম বলেন, ওই ছেলেটি নিজেই তার নাম আল-আমিন হোসেন সোহান বলেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই এবং তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানান, এ মামলায় কারাগারে থাকা এজাহারভূক্ত ১৯ আসামির মধ্যে আল-আমিন হোসেন সোহানসহ পাঁচ আসামির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বরিশালের দ্রুত বিচার আদালতের নির্বাহী হাকিম আনিছুর রহমান। এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
Leave a Reply